জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
হাবিবুর রহমান সুজন
ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। ছবি: খবরের কাগজ
ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। তিনি একই এলাকার রাশেদ বলীকে পরাজিত করেন। দুজনের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে খেলা চলে। অন্য বছরের তুলনায় এবারের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে অনুষ্ঠিত বলীখেলার এই ১১৬তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হন কুমিল্লার বাঘা শরীফ ও রাশেদ বলী।
ফাইনালে প্রায় ১ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের কাছে হার মানতে হয় রাশেদ বলীকে। একজন অন্যজনকে পরাস্ত করতে না পারায় যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের দিকে যাচ্ছিল খেলার ফলাফল। এ সময় পরিচালনা কমিটি জানায়, যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ নেই; যতক্ষণ পর্যন্ত ফলাফল না আসবে ততক্ষণ খেলা চলবে। কিন্তু কেউ কাউকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না। একসময় সন্ধ্যা নেমে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। বাঘা শরীফের একটি আক্রমণকে রাশেদ মঞ্চের রশি ধরে নিজেকে রক্ষা করেন। এতেই বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন ম্যাচের পরিচালক। কিন্তু বিষয়টি রাশেদ মানতে চাননি। বারবার আপিল করার পরও তাকে পরাজিত এবং বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন ম্যাচ পরিচালক।
বাঘা শরীফ বলেন, ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুবই খুশি। এই মুহূর্তে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ না। চট্টগ্রামের এই বলীখেলা শতবছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এখানে অংশগ্রহণ করতে পারা গর্বের।
রানারআপ হওয়া রাশেদ বলী বলেন, ‘আমাকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ হার আমি মেনে নিতে পারছি না। রশিতে হাত দিয়েছি নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম বলে। কিন্তু আমাকে এতেই হারিয়ে দেওয়া হলো। এটা কমিটির চরম অব্যবস্থাপনা। এভাবে কোনো খেলার ফাইনালের সিদ্ধান্ত হতে পারে না।’
খেলায় তৃতীয় হন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং চতুর্থ হন মোহাম্মদ শাহ জালাল। তাদের বাড়িও কুমিল্লা জেলায়।
এদিকে ১১৬তম জব্বারের বলীখেলা শুরুর আগেই দর্শকদের আগমনে লালদীঘি ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল ৪টায় নগরীর লালদীঘি মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ১২০ জন বলী। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতিবছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এদিকে জব্বারের বলীখেলা ঘিরে লালদীঘির পাড়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এই জনপদের সবচেয়ে বড় লোকজ মেলা। এবার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলা আমাদের শতবছরের ঐতিহ্য। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এবারের আসরের আয়োজন করেছি। এ ঐতিহ্য আমাদের লালন করতে হবে।’
হাবিবুর রহমান সুজন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত