হাবিবুর রহমান সুজন।
ছয় বছরেও শেষ হয়নি নতুন হাসপাতালের কাজ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় শত বছরের পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা। ছয় বছরেও শেষ হয়নি ৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ। ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সেবা নিচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
১৯২৪ সালে নির্মিত নলখাগড়া ও সিমেন্টের প্রাচীন ভবনে বর্তমানে চলছে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত এই ভবনের দেয়ালে ফাটল, সিমেন্ট খসে পড়ে গেছে, নলখাগড়া বেরিয়ে এসেছে। সামান্য ঝড়-দমকাতেই ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় ‘কেটি এমসি জেবি (কবির ট্রেডার্স ম্যাক কনস্ট্রাকশন)’। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ৯ বার। বর্তমানে ৮৯ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও ১১ ভাগ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। এরইমধ্যে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছয়টি কক্ষে গাদাগাদি করে চলছে চিকিৎসাসেবা। টিনের চালা মরিচাধরা, বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। ভিতরের ওয়ার্ডে শয্যার অভাবে অনেকে ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, বৃষ্টি হলে জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডে পানি পড়ে, টিন ও সিমেন্ট খসে পড়ে। ১৪টি পদে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
পশ্চিম কাঠালতলীর বাসিন্দা মো. রবিন বলেন, ছেলেকে ভর্তি করাতে এসে দেখি ঘরে জায়গা নেই, টয়লেট নেই, নারীদের জন্য গোসলের ব্যবস্থাও নেই।
কামাকুছড়া এলাকার মান্টি চাকমা বলেন, পেটব্যথায় ভর্তি হয়েছি, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। সামান্য অসুখেও খাগড়াছড়ি শহরে যেতে হয়।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তণয় তালুকদার বলেন, অতিরিক্ত রোগীর চাপ, শয্যা সংকট ও চিকিৎসক ঘাটতির কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন ভবনটি দ্রুত চালু হলে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্লানের আওতায় কয়েকটি রুমের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পরিকল্পনা আছে।
দীঘিনালার পাশাপাশি বাঘাইহাট সাজেক লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। ফলে প্রশাসনের জোরালো নজরদারিতে নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে চিকিৎসাসেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।